বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও প্রগতিশীল সমাজচিন্তার অন্যতম প্রধান আলোকবর্তিকা, শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানতাপস অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বৃহস্পতিবার ভোরে, ৮৯ বছর বয়সে, বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ময়মনসিংহের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থী, সহকর্মী, ভক্ত ও অনুরাগী রেখে গেছেন, যারা আজ শোকাভিভূত।
অধ্যাপক যতীন সরকার দীর্ঘদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর শ্রেণিকক্ষ ছিল কেবল জ্ঞান বিতরণের জায়গা নয়, বরং মুক্তচিন্তা, যুক্তিবাদ ও মানবিকতার পাঠশালা। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা কেবল পেশাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য নয়—এটি মানুষের বিবেক জাগ্রত করার এবং সমাজকে অন্যায় ও অন্ধকার থেকে মুক্ত করার হাতিয়ার।
তাঁর রচিত বহু গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও গবেষণাকর্ম বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সমাজচিন্তায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি তিনি ছিলেন অটল ও আপসহীন। সমকালীন রাজনীতি ও সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে নির্ভীক অবস্থান নেওয়ার জন্য তিনি ছিলেন বুদ্ধিজীবী মহলের প্রেরণার উৎস।
অধ্যাপক যতীন সরকার নিজেকে কখনো কেবল শিক্ষক হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি ছিলেন সংস্কৃতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অক্লান্ত কণ্ঠস্বর। শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীন ও সৃজনশীল চিন্তার চর্চা গড়ে তুলতে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। তাঁর অগ্নিঝরা বক্তৃতা ও প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে গভীর প্রজ্ঞা, ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিকতার মর্মবাণী।
তাঁর প্রয়াণে বাঙালি জাতি হারাল এক বিরল মননশীল ব্যক্তিত্ব, যিনি ছিলেন জ্ঞানের দীপশিখা এবং প্রগতির পথপ্রদর্শক। তিনি চলে গেলেও তাঁর শিক্ষা, আদর্শ ও সাহসী কণ্ঠ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবে।
জাতীয় পর্যায়ে যতীন সরকারের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সমগ্র বাঙালি জাতি।